জলবায়ু পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
history banner
জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক কর্মসূচী:
১৭১২ - বৃটিশ লোহার কারবারি টমাস নিউকোমেন কর্তৃক প্রথম স্টীম ইঞ্জিন উদ্ভাবন করেন, পরে যার ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়৻ তাঁর এই আবিষ্কার শিল্প বিপ্লব ও শিল্প-কারখানায় অধিক হারে কয়লা ব্যবহারের পথ সুগম করে।
১৮০০ - বিশ্বের জনসংখ্যা ১০০ কোটিতে পৌঁছায়৻
১৮২৪ - ফরাসী পদার্থবিদ যোসেফ ফুরিয়ার পৃথিবীর স্বাভাবিক 'গ্রীনহাউস প্রভাব' ব্যাখ্যা করেন এ ভাবে: ``পৃথিবীর তাপমাত্রা বায়ুমন্ডলের অবস্থানের কারণে বেড়ে যেতে পারে। কারণ, তাপ আলোক অবস্থায় বায়ু ভেদ করতে যতটা বাধাগ্রস্থ হয়, ফিরতি পথে রূপান্তরিত অনুজ্জ্বল তাপ হিসেবে তার থেকে বেশী বাধাগ্রস্থ হয়।``
১৮৬১ - আইরিশ পদার্থবিদ জন টিনডাল প্রমাণ করেন, জলীয় বাস্প এবং অন্য কিছু নির্দিষ্ট গ্যাস গ্রীনহাউস প্রভাব তৈরী করে। তিনি তার বক্তব্য এভাবে শেষ করেন: “মানুষের জন্য যেমন কাপড় লাগে, এই জলীয়বাষ্পের চাদর ইংল্যান্ডের গাছগাছালির জন্য তার চেয়েও প্রয়োজনীয়‘‘। একশ বছরেরও বেশি সময় পরে তাঁর সম্মানে ইংল্যান্ডের একটি প্রখ্যাত জলবায়ু গবেষণা সংস্থার নাম টিন্ডাল সেন্টার রাখা হয়।
polar bear
১৮৮৬ - কার্ল বেন্জ 'মটরভাগেন' প্রথমবারের মত জনসম্মখে নিয়ে আসেন। সাধারণত একেই প্রথম সত্যিকারের মটর গাড়ি বলা হয়।
১৮৯৬ - সুইডিশ রসায়নবিদ স্ভেনতে অ্যারহেনিয়াস এই সিদ্ধানত্দ উপনীত হন যে, শিল্পায়নের যুগে কয়লার ব্যবহার স্বাভাবিক গ্রীনহাউস প্রভাব বাড়িয়ে দেবে। তিনি ধারণা করেন এটা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তাঁর সিদ্ধান্তগুলো ছিল অনেকটা এরকম: 'মানব সৃষ্ট গ্রীন হাউস'-এর সম্ভাব্য আকার কার্বন ডাই অক্সাইড দ্বিগুণ হলে তাপমাত্রা সামান্য কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে যা আধুনিককালের জলবায়ু মডেলগুলোর মতই ।
১৯০০ - আরেকজন সুইডিশ, নুট অ্যাংস্ট্রম, বায়ুমন্ডলে উপস্থিত সামান্য ঘনমাত্রার কার্বন ডাই অক্সাইড কর্তৃক বর্নালীর অবলোহিত অংশগুলো ব্যাপক ভাবে শুষে নেয়ার ঘটনাটি আবিষ্কার করেন। যদিও এই আবিস্কারের তাৎপর্য তিনি অনুধাবন করতে পারেননি, তবুও তিনি প্রমাণ করেন, যৎসামান্য গ্রীন হাউস গ্যাসও উষ্ণায়ন ঘটাতে পারে।
১৯২৭ - জীবাশ্ব জ্বালানী পুড়িয়ে এবং শিল্প-কারখানা থেকে কার্বন নির্গমণের পরিমাণ বছরে একশ কোটি টন এ পৌঁছে৻
১৯৩০ - বিশ্বের জনসংখ্যা ২০০ কোটিতে পৌঁছে৻
১৯৩৮ - পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ১৪৭টি আবহাওয়া স্টেশনের রেকর্ড ব্যবহার করে বৃটিশ প্রকৌশলী গাই ক্যালেন্ডার প্রমাণ করে দেখান, গত ১০০ বছর জুড়েই পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো দেখান পুরো সময় জুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনমাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং একে তিনি উষ্ণায়নের কারণ বলে উল্লেখ করেন।
১৯৫৫ - প্রথম দিককার কম্পিউটারসহ নতুন প্রজন্মের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মার্কিন গবেষক গিলবার্ট প্ল্যাস বিভিন্ন গ্যাস কর্তৃক অবলোহিত রশ্মি শোষণের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেন। তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন, কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনমাত্রা দ্বিগুণ হলে তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রী সে. বাড়বে।
gas
১৯৫৭ - মার্কিন সমূদ্রবিজ্ঞানী রজার রেভেল এবং রসায়নবিদ হান্স সুস প্রমাণ করেন, অনেকে যেমন ধারণা করেছিলেন, বায়ুমন্ডলে যে কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত হচ্ছে তার সবটুকু সাগর শুষে নেবে না। তিনি লিখছেন, ``মানব জাতি বর্তমানে বৃহৎ পরিসরে একটা ভৌগোলিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে ...৻``
১৯৫৮ - নিজের তৈরী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চার্লস ডেভিড (ডেভ) কিলিং হাওয়াই'র মাওনা লোয়া এবং অ্যান্টার্কটিকায় কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণের প্রণালীবদ্ধ পরিমাপ শুরু করেন। চার বছরের মধ্যে প্রকল্পটি -যা আজো চলছে - দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে যে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনমাত্রা বাড়ছে।
১৯৬০ - পৃথিবীর জনসংখ্যা ৩০০ কোটিতে পৌঁছে৻
১৯৬৫ - যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের একটি উপদেষ্টা কমিটি হুঁশিয়ার করে বলে যে গ্রীনহাউস গ্যাসের প্রভাব একটা 'বাস্তব গুরুত্বপূর্ন' বিষয়।
১৯৭২ - স্টকহোমে জাতিসংঘের প্রথম পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন সামান্যই গুরুত্ব পায়। আলোচনা রাসায়নিক দূষণ, পারমানবিক বোমা পরীক্ষা আর তিমি শিকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। পরিণতিতে জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রম (ইউএনইপি) গঠিত হয়।
১৯৭৫ - পৃথিবীর জনসংখ্যা ৪০০ কোটিতে পৌঁছায়৻
১৯৭৫- মার্কিন বিজ্ঞানী ওয়ালেস ব্রোকার তাঁর একটা গবেষণাপত্রের শিরোনাম 'বৈশ্বিক উষ্ণায়ন' দিয়ে এই দুটি শব্দকে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়ে আসেন।
১৯৮৭ - পৃথিবীর জনসংখ্যা ৫০০ কোটি হয়৻
১৯৮৭ - ওজন স্তরের ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে মন্ট্রিল প্রোটকল সই হয়। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করে এই চুক্তি হয়নি, তবু এটা গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের উপর কিয়োটো প্রোটকলের চাইতেও অধিক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়।
১৯৮৮ - জলবায়ু পরিবর্তনের আলামত সংগ্রহ এবং মূল্যায়নের জন্য জলাবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্ত:সরকার পরিষদ (আইপিসিসি) গঠন করা হয়।
flooding
১৯৮৯ - কেমিস্ট্রিতে ডিগ্রীধারী যুক্তরাজ্যের প্রধাণমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার জাতিসংঘে এক বক্তৃতায় সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ''আমরা লক্ষ্য করছি বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ... এর পরিণতি হল ভবিষ্যতে মৌলিকতর ও বহুবিস্তৃত পরিবর্তন, যা এযাবতকালে আমাদের অভিজ্ঞতার বাইরে।'' তিনি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশ্বব্যাপী ঐকমত্যের আহ্বান জানান।
১৯৮৯ - জীবাশ্ব জ্বালানী পুড়িয়ে এবং শিল্প-কারখানা থেকে কার্বন নির্গমণের পরিমাণ বছরে ৬০০ কোটি টনে পৌঁছে।
১৯৯০ - আই পি সি সি প্রথম প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১০০ বছরে পৃথিবীর উষ্ণতা ০.৩ থেকে ০.৬ ডিগ্রী সে. বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের কারনে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমণের ফলে বায়ুমন্ডলে স্বাভাবিকভাবে তা যুক্ত হয় এবং নিশ্চিতভাবেই এই সংযুক্তি উষ্ণায়ন ঘটাবে।
১৯৯২ - রিও ডি জেনিরোতে বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারগুলো জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একটা সমঝোতা কাঠামোতে ঐক্যবদ্ধ হতে সম্মত হয়। এর প্রধাণ উদ্দেশ্য হল 'জলবায়ু ব্যবস্থায় মানুষের মারাত্নক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করা যাতে বায়ুমন্ডলে গ্রীনহাউস গ্যাসের ঘনমাত্রা একটা নির্দিষ্ট স্তরে স্থিতিশীল রাখা যায়।' উন্নত দেশগুলো গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার ১৯৯০ সালের মাত্রায় নামিয়ে আনতে সম্মত হয়।
১৯৯৫ - আইপিসিসি তার দ্বিতীয় প্রতিবেদনে 'পৃথিবীর জলবায়ুর উপর মানব প্রভাবের একটা নির্নয়যোগ্য' পরিমাপ প্রস্তাব করে। যেখানে প্রথম সুনির্দিষ্টভাবে মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী করা হয়।
১৯৯৭ - কিয়োটো প্রোটকল অনুমোদন পায়। উন্নত জাতিগুলো স্ব স্ব লক্ষ্যমাত্রার ব্যাপক ভিন্নতা সমেত ২০০৮-২০১২ সালের মধ্যে নির্গমণ গড়ে ৫ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। তৎক্ষণাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট এই চুক্তি অনুমোদন করবে না বলে জানিয়ে দেয়।
১৯৯৮ - বৈশ্বিক উষ্ণতার সাথে শক্তিশালী এল নিনো'র প্রভাব যুক্ত হয়ে বছরটিকে উষ্ণতম বছরে পরিণত করে। এ বছর গড় তাপমাত্রা ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার চাইতে ০.৫২ ডিগ্রী সে. বেশী ছিলো।
১৯৯৮ - বিতর্কিত 'হকি স্টিক' গ্রাফ প্রকাশিত হয় যেখানে উত্তর গোলার্ধের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে গত এক হাজার বছরের তুলনায় স্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । পরে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উৎসাহে কাজটি দুই দফা তদন্তের বিষয় হয়ে ওঠে।
১৯৯৯ - পৃথিবীর জনসংখ্যা ৬০০ কোটিতে পৌঁছে৻
২০০১ - প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রকে কিয়োটো আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে আনেন।
২০০১ - আইপিসিসি তার তৃতীয় প্রতিবেদনে বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে উষ্ণায়নের পেছনে 'নতুন এবং আরো জোড়ালো প্রমাণ' তুলে ধরে, এবং এজন্য মানুষের গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমনকে প্রধাণ কারন হিসেবে চিহ্নিত করে।
north pole
২০০৫ - কিয়োটো প্রোটকলের সাথে সম্পৃক্ত অবশিষ্ট দেশগুলোর জন্য এটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয়।
২০০৫ - যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার জি-৮ এর প্রধান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর মেয়াদকালের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বেছে নেন।
২০০৬ - স্টার্ন রিভিউ এই সিদ্ধান্তে আসে যে জলবায়ু পরিবর্তনকে অনিয়ন্ত্রিত রেখে দিলে বিশ্ব জিডিপি'র ২০% পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। অথচ এর হ্রাস টেনে ধরতে ব্যয় হবে বিশ্ব জিডিপি'র ১% এর কম।
২০০৬ - জীবাশ্ব জ্বালানী পুড়িয়ে এবং শিল্প-কারখানা থেকে কার্বন নির্গমণের পরিমাণ বছরে ৮০০ কোটি টনে পৌঁছে।
২০০৬ - আইপিসিসি'র চতুর্থ প্রতিবেদন জানাচ্ছে, আধুনিককালে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষের তৎপরতা গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমণ ৯০% এর জন্য বেশি দায়ী।
২০০৭ - আইপিসিসি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন ও প্রচারে অবদান, এবং এ ধরণের পরিবর্তন রোধ করতে সকল সামর্থ নিয়োজিত করার জন্য তাদের এ পুরষ্কার দেয়া হয়।
২০০৭ - বালিতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের আলোচনা সভায় সরকারগুলো ২০০৯-এর শেষ নাগাদ একটা নতুন চুক্তি সংঘটনের জন্য দুই বছর মেয়াদী 'বালি রোডম্যাপ' এ সম্মত হয়।
২০০৮ - পর্যবেক্ষন শুরুর অর্ধ শতক পরে মোনা লোয়ায় কিলিং প্রকল্প জানাচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনমাত্রা ১৯৫৮ সালের প্রতি ১০ লক্ষে ১৩৫ ভাগ থেকে বেড়ে ২০০৮ সালে এসে ৩৮০ ভাগ হয়েছে।
২০০৮ - দায়িত্ব নেয়ার দু‘মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশ্ববাসীর সাথে নিজের বলিষ্ঠ অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
২০০৯ - চীন বিশ্বের সর্বাধিক গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমণকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যায়। যদিও পার ক্যাপিটা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো বেশ এগিয়ে।
২০০৯ - ১৯২টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান কোপেনহেগেনে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠকে সমবেত হন৻
ভারতের প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধের প্রথম আঘাত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ওপর পড়বে বলেই আশংকা করছেন সেখানকার জনগন৻
তাদের কাছে এখনও বৈজ্ঞানিক তথ্যের অভাব রয়েছে, কিন্তু তারা লোকমুখে জেনেছেন যে টিপাইমুখ এলাকায় বরাক নদীর ওপর ভারত যে বাঁধ তৈরী করছে তাতে সিলেট অঞ্চলে ব্যাপক এক পরিবেশ সংকট তৈরী হবে৻
প্রতিবেদনটি শুনতে এখানে ক্লিক করুন:
বাংলাদেশের উত্তর-পুর্ব সীমান্তের শেষ প্রান্তে জকিগঞ্জ এলাকা। এই উপজেলা শহর থেকেও ১২ কিলোমিটার দুরে ভারতের আমলশীদ নামের এলাকায় বরাক নদীর মুখ। এইখানেই ভারতের বরাক নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে দুই ভাগে ভাগ হয়ে সুরমা এবং কুশিয়ারা নাম নিয়েছে।
সীমান্তের এই পয়েন্টে দাঁড়িয়ে নদীর অবস্থান দেখিয়ে দিতে দিতে স্থানীয় সাংবাদিক ফয়জুর রহমান খসরু বললেন, জীবনের সাত দশক পাড়ি দিয়ে এসে তিনি এখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কারন, টিপাইমুখ এলাকায় বরাক নদীতে বাঁধ দেয়া হলে জকিগঞ্জ এলাকার মানুষ হবেন তার প্রথম শিকার৻
people speaking to the bbc
বরাক নদীর জলে হাওরের মাছ আর কৃষিই হচ্ছে এই এলাকার মানুষের জীবিকার মুল শক্তি।
নদীর তীর ঘেঁষে বসবাসকারী মানুষের সাথে কথা বললে মনে হয়, এখন তাদের সবার মাঝেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে৻
ছয় সন্তান আর স্বামীসহ আট জনকে নিয়ে আমেনা বেগমের সংসার। সংসার চালিয়ে নেয়ার অন্যতম একটি অবলম্বন হচ্ছে হাওরের মাছ। কিন্তু এবার বর্ষা মৌসুমেও নদীতে পানি সেরকম আসেনি। আমেনা বেগমের বসতবাড়ি, হাওর, জমি সবই শুকনো।
গতবছর থেকেই এমনটা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি এবং লোকমুখে শুনে তাঁর ধারনা হয়েছে ভারত বরাক নদীতে টিপাইমুখ এলাকায় বাঁধ তৈরী সম্পন্ন করেছে৻ আমেনা বেগমের মতো তাঁর প্রতিবেশীদেরও একই রকম ধারনা। তাঁরাও লোকমুখে শুনেছেন, ভারত টিপাইমুখ এলাকায় বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী করছে।
৮৫ বছর বয়সী আব্দুল মাজেদ মিয়ার বসতবাড়ি বহুবার ভেঙ্গেছে নদী-ভাঙ্গনে। বসতবাড়ির জায়গা পরিবর্তন করতে হলেও সুরমা তীরবর্তী এলাকাতেই থেকেছেন সবসময়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাঁর মাঝেও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে যে, ভারত বরাক নদীতে বাঁধ দিয়ে সিলেট অঞ্চল শুকিয়ে ফেলছে।
বরাক নদীতে বাঁধ হলে জকিগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ এবং গোটা সিলেট অঞ্চল পড়বে ক্ষতির মুখে। বরাক নদী দুই ভাগে ভাগ হয়ে সুরমা কুশিয়ারা নাম নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে আবার ভৈরব এলাকায় এসে এক হয়ে মেঘনা নাম নিয়েছে।
দেশের অন্যতম প্রধান এই নদী মেঘনাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই বাঁধ- এই আশংকা থেকে সিলেটে স্থানীয়ভাবে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। সেখানে বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত টিপাইমুখ প্রকল্প প্রতিরোধ কমিটির নেতা বেদানন্দ ভট্টাচার্য বলছেন, তাঁরা স্থানীয়ভাবে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছেন।
river surma
ঢাকা থেকে বিভিন্ন সংগঠন সেখানে গিয়ে লংমার্চের মতো বড়ধরনের কর্মসুচী পালন করেছে। সিলেট বিভাগ উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ তিন দিন ধরে লংমার্চ করেছে ওই এলাকায়। কিছুদিন আগে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীও সেখানে লংমার্চ এবং নৌমার্চ কর্মসুচী পালন করেছে।
সিলেটে বিরোধী দল বিএনপি এব্যাপারে যেমন সোচ্চার তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী যাঁরা আছেন তারাও কিন্তু টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তুলে ধরছেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান বলছেন, বিষয়টিতে সবার ঐক্যবদ্ধভাবে এগুনো উচিত বলে তিনি মনে করেন।
অন্যদিকে সরকার যেসব তথ্য তুলে ধরেছে তাতে আশ্বস্থ হতে পারেছেন না সিলেট অঞ্চলের মানুষ। সিলেটের জকিগঞ্জে একটি বাজারে ব্যবসায়ী মনোয়ার আলীর সাথে কথা হচ্ছিলো৻ তাঁর বক্তব্য হচ্ছে তাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি বেড়েই চলেছে। তাঁর সাথে কথা বলার সময় সেখানে জড়ো হয়েছিলেন আরো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারাও একই রকম বক্তব্য তুলে ধরেন।
সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীর পাড়ের মানুষ টিপাইমুখ প্রকল্পের ব্যাপারে সঠিক তথ্য এবং পরিস্কার চিত্র জানতে চান। দলমত নির্বিশেষে স্থানীয় রাজনীতিকরাও একই ভাবে ভাবেন বলে মনে হয়েছে।
powered by digitalfamily
Non profit organization
Digital Social Tools
Digital Family is a social application of digital social network(dns)
Digital Social Network(DSN) is the sign of freedom.
and Digitalfamily is the freedom of source code.
and Digitalfamily is the freedom of source code.
Digitalfamily free online social service
| Now make your email account from Digitalfamily it's Free for all. join with us and enjoy with daily updated news,video,mp3 songs,movies,games.....more . Every Thing is free for you.This is social service for the humanity.So it's your right. Click on sign up and help yourself |
